Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সবুজ নদীর দেশে গেছেন?


 

সবুজ নদীর দেশে গেছেন?

সে দেশে ধূসর রঙা পাহাড়ের মাথায় থাকে শুভ্র বরফের টুপি, যাতে ভোরের প্রথম রোদ পড়লে কাঁচা সোনার মতো ঝলসিয়ে উঠে। শীতের মরশুমে এখানেই বরফের রাজা তার রাজ্যপাট সাজিয়ে বসে, এ হলো সেই স্বপ্নের দেশ যেখানে রাস্তার বাঁক ঘুরলেই দেখা মিলবে ছোট বড় অজস্র পাহাড়ি ঝর্ণা। কোথাও কোথাও নদী নিজেই এমন উঁচু থেকে আছড়ে পড়েছে যে তার রূপ দেখে মোহিত হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকে না।

হ্যাঁ, নর্থ সিকিমের কথাই বলছি। পর্বত, সরু পাহাড়ি পথ, খাড়া অতল খাদ, নিবিড় জঙ্গল, অনন্ত বরফ, ফুলেল উপত্যকা আর উজাড় করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খনি। দু'চোখের এক অফুরান বনভোজনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, যা মননের গভীরে দাগ কেটে যায়।

যাত্রাটা শুরু হয় সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে। শেয়ার গাড়িতে হোক বা রিজার্ভ গাড়িতে, মূলত ৩ দিন ২ রাত্রির প্ল্যানটাই বর্তমানে জনপ্রিয়। এর বাইরে কাস্টমাইজ প্ল্যান যে কেউ তার মতোন বানাতেই পারেন। উত্তর সিকিমের মূল দুই পাহাড়ি গ্রাম লাচেন ও লাচুং, এখানে 4 star অবধি হোটেল রয়েছে। পকেট বাঁচানো বাজেট হোটেলের ব্যবস্থা থেকে লাক্সারির সকল ধরনের বন্দোবস্ত রয়েছে, সন্ধ্যার পর যতই মাইনাসের নিচে তাপমাত্রা নেমে যাক।

গ্যাংটক থেকে বেলা ৯টা/১০টা নাগাদ রওনা দিয়ে কাবি, ফোদং, মংগন, সিংঘিক, চুংথাং হয়ে লাচেন-চু নদীর তীর ধরে লাচেন (উচ্চতা ৯২০০ ফুট) পৌঁছে সেই দিনের মতো বিশ্রাম। গোটা পথের একধারে খাড়া পাহাড় ও পাইন-ফারের সারি, অন্য ধারে মায়াবী সবুজ তিস্তাকে সাথে পাবেন চুংথাং অবধি। এই চুংথাং এ লাচেন-চু ও লাচুং-চু এই দুই নদীর মিলনের ফলে তিস্তার জন্ম হচ্ছে। 

গ্যাংটক থেকে চুংথাং-এর দূরত্ব ৯৬ কিলোমিটার, চুংথাং থেকে লাচেন-এর দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার। লাচেন থেকে কাকভোরেই বেরিয়ে পড়তে হবে গুরুদংমার যাত্রীদের, লাচেন থেকে থাঙ্গু ৩৫ কিলোমিটার, আর সেখান থেকে গুরুদংমার আরও ৩২ কিলোমিটার। তিব্বতীয় রুক্ষ মালভূমির সৌন্দর্যমণ্ডিত রাস্তা ধরে সোজা পৌঁছে যাওয়া গুরুদংমার সরোবরে। ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নীল জলের অনিন্দ্যসুন্দর এই সরোবর প্রথম দর্শনে যে কাউকে অভিভূত করে দেবে। তুষারশৃঙ্গে ঘেরা প্রেক্ষাপটে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাকরুদ্ধ করে রেখে দেয়। গুরু পদ্মসম্ভবের স্মৃতিবিজড়িত এই সরোবরটি হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।

গুরুদংমারের আবহাওয়া ভীষণ খামখেয়ালি, তাই দুপুরের আগেই সরোবর দর্শন সাঙ্গ করে লাচেন ফিরে আসা উচিত। লাচেন থেকে ফেরার পথে থাঙ্গু’তে (উচ্চতা ১৩৫০০ ফুট) প্রাতরাশ সেরে নিতে পারেন। এই থাঙ্গু থেকে একটি রাস্তা চলে যাচ্ছে চোপতা ভ্যালি। এখান থেকেই কালাপাত্থর যাওয়া যায়।

অতিরিক্ত উচ্চতার দরুন এখানের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ভীষণ কম, তাই এখানে খুববেশি চলাফেরা না করাই ভালো, দৌড়ঝাঁপ তো নৈব নৈব চ। সরোবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে অসাধারণ সৌন্দর্য দেখাটাই সারা জীবনের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা। অধিকাংশ ভ্রমণকারীরই শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এখানে। যাওয়ার আগের দিন থেকে হোমিওপ্যাথি কোকা-৬ ওষুধটি খেয়ে দেখতে পারেন। উচ্চতাজনিত সমস্যার সমাধান হতে পারে। এছাড়া কর্পূর শুঁকলে শ্বাসকষ্ট অনেকটা উপশম হয়।

গুরুদংমার থেকে লাচেনের হোটেলে ফিরে, মধ্যাহ্নভোজন সেরে সওয়া হওয়া লাচুং এর উদ্দেশ্যে। চুংথাং হয়ে যেতে হবে। এখানে এই রাতটা কাটিয়ে ভোরবেলা যাত্রা শুরু ২৩ কিমি দূরের ইউমথাং এর পানে। ১১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ইউমথাং উপত্যকা শীতকালে পুরোপুরি ঢেকে যায় শ্বেতশুভ্র বরফচাদরে, তখন তার এক অন্য রূপ। বাকি সময় সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া উপত্যকা, তুষারমুকুট মাথায় পড়া পর্বতশ্রেণি আর নীলরঙা নদীর বয়ে চলা বিভোর করে রেখে দেয় ভ্রমণকারীকে। ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’ ইউমথাং উপত্যকা ভরে থাকে বিভিন্ন রঙের রডোডেনড্রন, প্রিমুলা ও অন্য নানান প্রজাতির ফুলও শোভা বাড়ায় সেই অসাধারণ সৌন্দর্যে। ইউমথাং উপত্যকা দেখে পৌঁছে যান আরও ২৩ কিমি দূরে চীন সীমান্তের কাছে ১৫০০০ ফুট উচ্চতার অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান ইয়ুমেসামডং বা জিরো পয়েন্ট। 

লাচুং থেকে অন্য একটি রাস্তা ধরে পৌঁছনো যায় তুষারসাম্রাজ্য কাটাও, দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। তবে এক্ষেত্রেও চিন সীমান্তের নৈকট্য ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের দরুণ অধিকাংশ সময়েই এ পথ পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। 

এই নর্থ সিকিম ভ্রমণের উপযোগী ইকোনমি, স্ট্যান্ডার্ড কিংবা ডিলাক্স যেভাবে ভ্রমণের প্ল্যান চাইবেন, সেভাবেই বন্দোবস্ত হয়ে যা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ